এম জাহেদ চৌধুরী, চকরিয়া (কক্সবাজার)
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মেরুকরণ পাল্টাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। এই আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে।
এ আসনে ১৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে আওয়ামী লীগ মনোনীত সালাহউদ্দিন আহমেদসহ ৫ জনের প্রার্থিতা বাতিল হয়। নির্বাচন কমিশনে আপিলের পরও সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রার্থিতা বাতিলের আদেশ থাকে।
একই দিন জেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দীন মাহমুদ নিজের ফেসবুক আইডিতে ঘোষণা দেন, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না, ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন। তিনিও মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক চেয়েছিলেন। একজনের বাতিল, অন্যজনের প্রত্যাহারের ঘোষণায় মহাজোট সমর্থিত প্রার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন।
গুঞ্জন আছে, মহাজোটের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে কক্সবাজার-১ আসনে হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে লড়বেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতি (বহিষ্কৃত) মেজর জেনারেল (অব.) বীরপ্রতীক সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম। কিন্তু চকরিয়া ও পেকুয়ার মানুষের কাছে অপরিচিত ইবরাহিম হঠাৎ এসে প্রার্থী হলে কতটুকু সুবিধা করতে পারবেন, তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন বর্তমান এমপি চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম। চকরিয়া-পেকুয়ার একটি পৌরসভা ও ২৫টি ইউনিয়নের দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিচিত প্রার্থী হিসেবে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও নৌকার প্রার্থী বা এলাকার কোনো শক্তিশালী বিকল্প প্রার্থী না থাকায় ভোটের মাঠে বাড়তি সুবিধা ভোগ করবেন বলেও মনে করছে স্থানীয়রা।
এ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী হয়েছেন হোসনে আরা। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াসের সহধর্মিণী। এছাড়া আছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্যের ছেলে তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী তুহিন ও কল্যাণ পার্টির বহিষ্কৃত মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন। তবে আব্দুল আউয়াল মামুন কক্সবাজার-৩ আসনেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তিনি ওই আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার পর সালাহউদ্দিন আহমেদ সিআইপি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক আমাকে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে মুক্তি দিয়েছে। তাদের একজন প্রতিনিধিও ইসি কার্যালয়ে অনাপত্তি জানাতে উপস্থিত ছিলেন। এরপরও আমার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। নেত্রীর নির্দেশনা পেলে উচ্চ আদালতে আপিলসহ প্রার্থিতা ফিরে পেতে প্রয়োজনীয় সব করব।’
কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘নৌকার প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ একজন শ্রদ্ধাভাজন নেতা। আমি তার ও তার অনুসারীসহ চকরিয়া-পেকুয়ার সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে সাথে নিয়ে নির্বাচন করব। যদি বিজয়ী হতে পারি, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে এই এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করব।’
এদিকে নৌকার প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার সংবাদ জানাজানি হলে জাফর আলম এমপির অনুসারীরা আনন্দে মেতে ওঠেন। পৌরশহর এলাকায় তাদের আতশবাজি ফুটিয়ে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাদের ভাষ্য, গতবার নৌকা প্রতীক নিয়ে ৪৩ বছর পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আলম বিজয়ী হয়েছিলেন। নানা ষড়যন্ত্রের কারণে এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ অবস্থায় জাফর আলম বিপুল ভোটে ফের বিজয়ী হবেন বলে তাদের অভিমত।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-